বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:১০ অপরাহ্ন
সময়টা ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-এর সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তৎকালীন সংবিধান অনুসারে, কোন দল ক্ষমতা হস্তান্তরের ৯০ দিন পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং মধ্যবর্তী ৯০ দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া তদারকি করবে ও এর অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক সংকট শুরু হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে কারণ রাজনৈতিক দলগুলো অন্য পাঁচজন প্রার্থীর ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। এই অন্তর্বর্তী সরকারের সূচনা হয় সহিংস বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ লগি বৈঠা আন্দোলন নামক বিক্ষোভ শুরু করে এবং প্রথম মাসেই ৪০ জন নিহত হয়ও শতশত আহত হয়। তত্বাবধায়ক সরকার, ব্যাপক আলোচনার পর দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আলোচনায় আনতে সমর্থ হয় এবং ৩ই জানুয়ারি ২০০৭ সালে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়। আওয়ামী লীগ থেকে ঘোষণা করা হয়, তারা নিজে ও এর সাথে যুক্ত ছোটদলগুলো ২২শে জানুয়ারি ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচন বর্জন করবে। তারা ভোটার তালিকা সঠিকভাবে প্রণয়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ উত্থাপন করে। পরবর্তীতে এটাকে কেন্দ্র করে দেশে আরো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে সমর্থন করে সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে, এর পূর্বেই দেশে জরুরি অবস্থা জারি ছিল। ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তার প্রায় সকল উপদেষ্টার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং তিনি নিজেও প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১২ই জানুয়ারি ফখরুদ্দীন আহমদ তার স্থলাভিষিক্ত হন, যিনি বিশ্ব ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নতুন গঠিত সরকার দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সকল প্রকার রাজনৈতিক কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে সরকার দুর্নীতি মামলাগুলোর উপর কাজ শুরু করে; রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ ১৬০ জনের বিরুদ্ধে ১৯৯০-এর দশকে করা কার্যক্রমের উপর চার্জশিট দাখিল করে ও তদন্ত শুরু করে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশের উভয় রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু কিছু পর্যবেক্ষক মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক মেরুকরণ কমাতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে পাঠাতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিলেন। তত্বাবধায়ক সরকার, ২০০৬-এর ২৮ শে অক্টোবর শেখ হাসিনার ডাকা লগি বইঠা আন্দোলন নামক বিক্ষোভের সময় ৪০জন ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করে। সর্বোচ্চ আদালত রায় প্রদান করেন, জরুরি অবস্থার অধীনে খালেদা জিয়া জরুরি অবস্থা জারির পূর্বের কোন ঘটনায় অভিযুক্ত হবেন না কিন্তু ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে করা একটি আপিলে সর্বোচ্চ আদালত মামলা পরিচালনার রায় প্রদান করেন। ২০০৮ এর শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে এবং ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট দুই তৃতীয়াংশ ভোটে জয় লাভ করে ও ২০০৯-এ সরকার গঠন করে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রদেয় ভোট যে কোনো স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে রহস্যজনকভাবে বেশি ছিল। পক্ষান্তরে ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচন, যা জাতীয় নির্বাচনের পরপরই অনুষ্ঠিত হয়, সে নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার অনেক কম ছিল। ফলে এই সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ আচরণের সঙ্গে গরমিলের ছিল।২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল রোড়ের বাড়ি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে।তার দুই দিন আগে আমাদের অস্ট্রেলিয়ার নেতৃবৃন্দের সাথে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে প্রবাসে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমদেরকে আহ্ববান জানান ঐদিন রাতে আমরা তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়ার বহিষ্কার দাবী জানাই যেটা পরের দিন অনেক গুলো দৈনিক কাগজে হেডলাইন করা হয়।আমার মনে পড়ে তার কয়েক মাস আগে অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা শেষ করি এবং অস্ট্রেলিয়ায় রেসিডেন্সি পায় তাই পুরোপুরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। অপ্রতিরোধ্য এক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকাবাহী প্রবাস থেকেও নেতৃত্বের এক মহাকাব্যের নাম তারেক রহমান যেটা শুরু করেছেন দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে ভার্সুয়াল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে দেশে বিদেশে আমাদেরকে ঐক্যেবদ্ধ করে চুড়ান্ত বিজয়ের দারপ্রান্তে নিয়ে আসেন তারেক রহমান। একদিন নয়, দু’দিন নয়, এক মাস নয়, নয় একটি বছর! দীর্ঘ সতেরো বছরব্যাপী জোয়ারভাটার এক অমানিশা গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলন যার মূল নেতত্বে ছিলেন তারেক রহমান। ২০০৭ সালের এক-এগারো থেকে ২০২৪-এর আগস্ট অব্দি— বাংলাদেশের রাজনীতিকে যে কুহেলিকা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল; তাকে শরবিদ্ধ করেছিল একটি নাম— জনাব তারেক রহমান। শারীরিক উপস্থিতি ছিল তাঁর সুদূর লন্ডনের সীমাবদ্ধ পরিসরে। তবুও বাংলাদেশের মেঠোপথে, রাজপথে, শহরে, নগরে, মহানগরে, পাড়া-মহল্লায় ও গ্রামের চায়ের দোকানে; কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দেয়াল লিখনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের টাইমলাইনে এবং বিশ্বের যেখানে বাংলাদেশী আছেন সর্বত্রই তিনি ছিলেন অনুঘটকের মতো সক্রিয়। যেনো- অপ্রতিরোধ্য এক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকাবাহী হিসেবে তিনি ছিলেন আগামী সম্ভাবনার বাতিঘর। তাই আজো তাকেই ঘিরে কোটি তারুণ্য স্বপ্ন বুনে নতুন বাংলাদেশের। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে তাঁর এমন ধাবমান উপস্থিতি শুধু ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিলো না। বরং ছিলো এক রাজনৈতিক অনুষঙ্গ, যেখানে নেতৃত্ব শারীরিক ভাবে অনুপস্থিত থেকেও অতিক্রম করে গেছে চলমান ঘটনাপ্রবাহের ঐতিহাসিক মঞ্চের ডায়াসে।২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য প্রবাসে যাবার পর অনেকেই ভেবেছিলেন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটলো! কিন্তু তিনি সেই সুদূর প্রবাস থেকে দলের ভিতরে বিকেন্দ্রীকরণ ও আত্মরক্ষামূলক কৌশলের একটি পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো গড়ে তোলেন। দলীয় সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে স্থানান্তর করে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেন। প্রতিটি এলাকায় নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের ভূমিকায় এই নীতিতে তিনি কর্মীদের দায়িত্ববোধ ও কর্ম-স্পৃহা জাগিয়ে তোলেন। ‘নেতৃত্ব নিন, নেতৃত্ব দিন’— এমন স্লোগান দিয়ে সাধারণ কর্মীদের বুকে সাহস যুগিয়েছেন। ছোট ছোট সেল ভিত্তিক কর্ম-পরিকল্পনা এমনভাবে গড়ে তোলেন তিনি। যেগুলো রাষ্ট্রযন্ত্র খুব সহজে তাঁর নজরদারিতে আনতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ায় আমি মোঃমোসলেহ উদ্দিন হাওলাদার আরিফ এবং তৎকালীন আহ্ববায়ক মো দেলওয়ার হোসেন সহ বর্হিবিশ্বে তৎকালীন যুক্তরাস্ট্র বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সম্রাট, ফিনল্যাণ্ডের সভাপতি কামরুল হাসান জনি, ডেনমার্কের সভাপতি গাজী মনির আহম্মেদ, সুইডেনের তৎকালীন সভাপতি মহি উদ্দিন আহম্মেদ ঝিন্টু এবং গত কয়েক বছর বিএনপির আন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে সারা বিশ্বে আন্দোলনের সূচনা করি এবং টানা সতের বছর সাংগঠনিক এবং কুটনৈতিক তৎপরতা অভ্যাহত রাখি।সময় সময় লন্ডন থেকে কখনো তারেক রহমান আবার কখনো অন্য নেতৃবৃন্দ ভার্সুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষনা এবং বাস্তবায়ন আমরা করতাম। লন্ডনে ২০০৭ সাল থেকে চিকিৎসা অবস্থায় ছিলেন অনেক দিন এরি মাঝে ২০১২-১৩ সালের দিকে কুটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি জনাব তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে প্রবাসে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টিয়ান এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছায়া দেওয়ার কাজ শুরু করি অস্ট্রেলিয়ার নিউসাউথওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারের মাধ্যমে কো-অডিনেটর মো.মোসলেহ উদ্দিন হাওলাদার আরিফ, লন্ডনের কেমরীজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর মাহাদি আমিন, যুক্তরাস্ট্রে সাংবাদিক আশিক ইসলাম এবং সাংবাদিক সালেহ শিবলী ।অনুষ্ঠান গুলোতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গদ্বয়।অ্নেক দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিব্যক্তিবর্গ বলেছিলেন যে তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শন যদি বিভিন্ন দেশে প্রচলিত থাকে তাহলে ঐসকল দেশের রাজনীতির অনেক উন্নয়ন সাধিত হবে।সেটাই প্রমানিত হলো২০২৪ সালে ৩৬ শে জুলাইয়ে তারেক রহমানের দুরর্শি আধুনিক নেতৃত্বে ছাত্রজনতার কঠিন দেশেবিদেশে আন্দোলনের মাধ্যমে। অনেকেই এখন জুলাই আগষ্টের আন্দোলনের ভূমিকা এবং নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাদের কাছে প্রশ্ন প্রবাসে লক্ষ লক্ষ মানুষ গত ১৭ বছর আন্দোলন করেছেন ঐখানে কি কোন সমন্বয়ক ছিল? আমরা প্রত্যেক বাংলাদেশী নিজেরা নেতৃত্ব তুলে নিয়ে প্রবাসে আন্দোলন গড়ে তুলি আমদের সমন্বয়কারী ছিলেন তারেক রহমান নিজে। জনাব তারেক রহমান জানতেন যে, ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী তাঁকে রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করতে চায়। তাই তিনি নিজেকে সামনে এনে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আন্দোলনের পরিবর্তে জনগণ কেন্দ্রিক একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি সুস্পষ্ট করে দিয়েছিলেন— ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে। ২০২৩ সালে আগষ্টে লন্ডনে ইতিহাসের সর্ববৃহওর প্রবাসীদের মিলন মেলা এবং মার্চ ফর গণতন্ত্রের এক বিশাল সমাবেশ হয়েছিল, সেই সময় আমার সাথে এক সংক্ষিপ্ত মিটিং হয় উনি অবাক হলে আমি ২৭ ঘন্টা বিমানে গিয়ে সেই সমাবেশে অংশগ্রহন করি।তিনি বলেছিলেন আন্দোলন চালিয়ে যাও বিজয় হবেই। সেই বাণীর বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া গণআন্দোলনে যা তাঁর দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। জনাব তারেক রহমান বিশ্বাস করেছিলেন যে, নেতৃত্ব কেবল শারীরিক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে নয় বরং আপাত অনুপস্থিতির ভেতর দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে কর্মীরা দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয় এবং জনগণ নেতা খোঁজে না বরং ঘটনার পরম্পরায় নিজেই নেতা হয়ে ওঠেন এক সময় । এই বিশ্বাসের বর্ধিত রূপ ছিল সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ। সহিংসতার পরিবর্তে তিনি গণআন্দোলনে গান, কবিতা, থিয়েটার, মিম ও ছোট ভিডিওর মাধ্যমে এক প্রকার ‘সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থান’ গড়ে তোলেন। এসব কৌশল দেশের তরুণদের কাছে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়ে ওঠে এক শান্তিপূর্ণ কিন্তু কিন্তু সুতীব্র প্রতিবাদের এক অবয়ব। যা চব্বিশের গণআন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানে গিয়ে শেষ হয়। তবে রাজপথে জনতার ঢল নেমে আসাই শেষ কথা ছিলো না। বাংলাদেশের ইতিহাসে বারংবার দেখা গেছে— জনগণ রাজপথ দখল করলেই সরকার তার টিকে থাকার শেষ আশ্রয় হিসেবে সশস্ত্রবাহিনীর ওপর নির্ভর করে। সেই বাস্তবতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। ১৯৭৭ সালের বিপর্যস্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে তিনি যেমন পুনর্গঠন করেছিলেন জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার নীতি থেকে…! তেমনি তাঁর সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমানও উপলব্ধি করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনস্তত্ত্বে এখনও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধের বিষয়টি প্রোথিত রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনায়। তাই তাদের সরকার-বিরোধী অবস্থানে আনাটা যেমন যুক্তিযুক্ত নয়। তেমনি জনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়াটাও অযৌক্তিক। এই নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো— সরকার ও জনগণের ভেতর একটি ভারসাম্য পূর্ণ অবস্থান আনয়নের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক ভূমিকা। সেই লক্ষ্যেই বহু আগে থেকেই শুরু হয়েছিল তার দ্বিতীয় মহাপরিকল্পনা। মাঠপর্যায়ে শহীদ জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনাব তারেক রহমান একটি নীরব পরামর্শক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। যারা গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে নাটকীয় মুহুর্তে—আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সশস্ত্র বাহিনীর কিছু মধ্য-পদস্থ কর্মকর্তা ‘আইনের শাসন সমুন্নত’ রাখার পক্ষে দৃঢ় বার্তা দিলে পরিস্থিতি আমূল পাল্টে যায়।জনাব তারেক রহমান কখনো সেনা হস্তক্ষেপ চাননি। কিন্তু জনগণের কণ্ঠে নিরপেক্ষতার আহ্বান এমন সুরে বেজেছে যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিবেক জাগ্রত হয়ে ওঠে। এখানেও ছিল জনাব তারেক রহমানের সুনিপুণ নির্দেশনা যাতে দ্বন্দ্বে না গিয়ে জনগণের জবানে সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্বকে ঘোষণা করা হয়। ফলশ্রুতিতে সরকার বাড়তি শক্তি প্রদর্শন করতে চাইলে এট বিপরীতে সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বের শপথ আরও উঁচু স্বরে প্রতিধ্বনিত হয় এবং স্বৈরাচারী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রকম্পিত হতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, শিল্পকর্মে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এক ধরনের ‘জনগণের সেনাবাহিনী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। কেউ কেউ নরম ভাষায় বলেন, ‘আমরা তো দেশের পক্ষে, জনগণের বিরুদ্ধে নই।’ অনেকে আদেশ পেলেও ‘লজিস্টিক সমস্যা’, ‘যোগাযোগ বিঘ্ন’ ইত্যাদি বিবিধ কারণ দেখিয়ে মাঠে নামতে দেরি করেন৷ কার্যত নিজেকে দেশের জনগণের বিপক্ষে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে।এই সংযত ও সূক্ষ্ম কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ না থাকার পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছিলেন জনাব তারেক রহমান। যার ফলে গণআন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেনাবাহিনী।এই দূরদর্শী ও আত্মসংযমী নেতৃত্বের কারণেই তিনি কেবল একটি দলের নেতা নন বরং জনণের প্রতিরোধের স্থপতিতে পরিণত হন। সামনে না থেকেও জনগণের সাথে থাকবার যে কৌশল সেটিও রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে গিয়েও জনগণকে এনে দিয়েছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এক চূড়ান্ত বিজয়ের পতাকা। ২০১৩ আমরা নিউসাউথওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে তারেক রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে একটি সেমিনার করি সেই অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক বিরুধী দলীয় নেতা জন দাউদ বলেছিলেন তারেক রহমানের তৃনমূলের যে ভাবনা এবং সাংগঠনিক কৌশল এটা বিশ্বের যেকোন রাজনৈতিক দলের জন্য খুবই অনুকরনীয়। জনাব তারেক রহমান দেখিয়ে দিয়েছেন-সচেতন নাগরিকদের কৌশলী নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে একজোট করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিভাবে করতে হয়। তারেক রহমান সবসময় বলেন নেতৃত্ব মানেই মাইক হাতে সামনে দাঁড়ানো নয়, বরং ছায়া হয়েও অন্যদের আলোকিত করে তোলা। ২১ শে জুলাই ২০২৪ তারেক রহমানের নিদর্শনায় আমরা সিডনিতে টানা তিনটি অনুষ্ঠান করেছিলাম সচেতন নাগরিকদের নামে ছাত্রজনতার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ এবং খুনি হাসিনার পদত্যাগের দাবী প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার প্রবাসী যাহা ছিল ইতিহাস।২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতি কিন্তু দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যেটা দেশে বিদেশে এক অন্যরকম আন্দোলনের মাধ্যমে প্রমান করেছেন যেটা আজ ইতিহাস জুলাই আগষ্ট ঐতিহাসিক ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান।